বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী ও সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:-
‘আমি রাজনীতি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে বাসায় থাকব। আমি আমার বাচ্চাদের সময় দিতে পারিনি। পেটে বাচ্চা নিয়েও আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমাকে প্রধানমন্ত্রী এমপি বানিয়েছিলেন। এর জন্য তাকে ধন্যবাদ। আমি কেবল আমার সন্তানদের নিয়ে থাকতে চাই। তাই আমার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।
আমি এতো তাবেদারী করতে পারব না। আমি রাজনীতির জন্য অনেক হিসেব করে পথ চলেছি, কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক পথে চলেছি। কখনও ভুল পথে পা ফেলিনি। তারপরও সবাই বলে আমি যোগ্য নই। কারণ আমার কাছে প্রার্থী হওয়ার মতো অর্থ নেই। আমি বর্তমান রাজনীতিতে বেমানান।
নারী হওয়া আজন্ম পাপ। তার মাসুল গুনতে হয় প্রতিনিয়ত। নারী এমপি হলে তাদের কেবল নারী ইস্যুতে কাজ করার অধিকার আছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে সকলের কাজ করার অধিকার নেই। একজন নারী সর্বত্র এতো পরীক্ষা দেয়! তবুও তারা খারাপ ও অযোগ্য। নারী ক্ষমতায়ন তখনই হবে যখন ঘরে বাহিরে সিদ্ধান্তে নারীরও ভূমিকা থাকবে।
আমি একজন ভিতু মানুষ হয়ে থাকতে চাই না। সত্য কথা বলতে ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চাই। আমি খারাপ না হলে মিথ্যে অপবাদ মেনে নিব না। আমাকে হটাতে অনেক মিথ্যে অপবাদ দেয়া হয়েছে যা জেনে আমি ক্ষিপ্ত। চামচামি করা আমার নিয়মে নেই। মেয়ে মানুষ তুমি এভাবে চলতে পারবে না, ওভাবে চলতে পারবে না এসব আমি মেনে নিতে পারি না। আমি স্বাধীন। আমি পাপ কে ঘৃনা করি, তা যদি পরিবারের কেউ হয় তাকেও ত্যাগ করি। যা আমার কাছের মানুষরা জানে। আমি পরাজয় মেনে নিতে রাজি। যদি সেটা নিয়মের মধ্যে হয় তবে অনিয়মের কাছে পরাজয় মানতে পারি না।
আমার কাছে কারও কিছু চাওয়ার থাকলে দূরে থাকেন। কারন আমি কারও জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখি না। আমি কেবলই শূন্য। আমি সংগ্রাম যুদ্ধ করার শক্তি রাখলেও সকলের নত মাথা আমাকে বিরত হওয়ার বার্তা দেয়। পরাজিত সৈনিকের মতো খুঁড়িয়ে হাঁটার চাইতে না হাঁটাই ভালো। বিদায় প্রাণের সংগঠন। ক্ষমতায় নাই বা পেলে দুর্দিনের কর্মী হব, যদি দেহে থাকে প্রাণ।
সাবিনা আক্তার তুহিন ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে প্রথমাবস্থায় নির্বাচিত অপর ৪৭ জন সদস্যের সঙ্গে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি। দলের আন্দোলন ও সংগ্রামে রাজপথে বরাবরই সক্রিয় এই নেত্রী।’