উজ্জ্বল রায় নিজস্ব প্রতিবেদক নড়াইলঃ
সরকারী ত্রাণের প্রতিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে কালিয়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা । নড়াইলের কালিয়া পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে বিলের মাঝে পাটেশ্বরী গুচ্ছগ্রাম।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী ইলিয়াস আলী কোনরকম দিনমজুর করে খায়। পরিবারের একমাত্র ছেলেও প্রতিবন্ধী। উজ্জ্বল রায় নিজস্ব প্রতিবেদক নড়াইল জানান, ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে প্রায় একমাস খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তিনি। প্রতিদিনই প্রতিক্ষায় থাকেন কবে আসবে সরকারী ত্রান।
এরকমই আরেকজন রাহিলা বেগম,স্বামী মারা যাবার পর থেকেই পরের বাড়ি কাজ করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৩ জনের সংসার চলে। পরের বাড়িতে কাজ করে দিন পার করা এই নারীকে কোন কাজেই রাখছেন না গ্রামের লোকেরা।
গত ১০ দিন তার হাড়িতে চাল উঠেনি। একই ভাবে করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন কালিয়ার অন্ততঃ ৫ টি গুচ্ছগ্রামের হাজারো বাসিন্দা।
এখানকার বাসিন্দা জয়নব বিবি জানান,একবার মাত্র ৫ কেজি চাল পেয়েছি আর কিছুই পাইনি,শুনেছি সরকার গরীব মানুষের জন্য চাল ডাল,তেল দিচ্ছে।
আমরা সহায় সম্বলহীন মানুষ এখানে থাকি। গত একমাস কোন কাজ নাই। গ্রামে এর ওর বাড়ি থেকে যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি।
রোববার(১৯ এপ্রিল) গুচ্ছগ্রামে গেলে ত্রানের জন্য ছুটে আসেন না খাওয়াা মানুষগুলো।
এখানে বসবাসকরা ছোট শিশুদের জন্য ঘরে দুধনেই,একবাটি দুধের মধ্যে কয়েক বাটি পানি দিয়ে কোন রকমে দুধ খাওয়াচ্ছেন গরীব মায়েরা। অধিকাংশ বাড়ির চুলায় আগুন ধরছে না।
কমেলা বেগম নামের এক মাঝবয়সী নারী কাদতে কাদতে জানান,প্রায় ১০ দিন হয়ে গেল চুলায় খাবার কসাতে পারিনি।খোজ নিয়ে জানা গেছে ৩০ পরিবারের এই গুচ্ছগ্রামে অন্ততঃদেড়শ মানুষের বাস।
এদর মধ্যে কেউ বাজারে চটপটি বিক্রেতা,কেউ ট্রলারে কাজ করে আবার কেউবা ভ্যান চালায়। করোনা পরিস্থিতির কারনে গত একমাস যাবত এসবলোকদের নেই কোন কাজ,নেই ত্রানও।
স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিপক্ষে ভোট দেয়ায় এই গুচ্ছগ্রামে সরকারী কোন ত্রান পৌছেনি।একই রকম অবস্থা ইউনিয়নের যাদবপুর,মহিষখোলা,পাটেশ্বরী,সাতবাড়িয়া এলাকায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,ইউপি চেয়ারম্যান সহ সরকারী কর্মকর্তারা নিজেদের পছন্দমতো লোকদেরই সরকারী ত্রান দেয়া হয়েছে,দরিদ্রদের হিসাব না করেই সরকারী ত্রানে একধরনের স্বজনপ্রীতি করা হচ্ছে।
যাদবপুর চৌরাস্তা এলাকায় ভ্যান চালায় অন্ততঃ ৩’শ জন। এদের কারো কাছে সরকারী ত্রান পৌছেনি।
ভ্যানচালক হাফিজুর বিশ্বাস,আনোয়ার বিশ্বাস,রফি শেখ,ইমরুল সহ কয়েকজন জানান,একবার মাত্র ১০ কেজি চাল দিয়েছে তাও মেপে দেখেছি ৭ কেজি হয়েছে। ভ্যানচালক ইমরুল বলেন,চেয়ারম্যান জহুর তার নিজের স্বজনদের চাল,তেল,ডাল,সাবান দিয়েছে।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে,প্রায় ৫ হাজার পরিবারে এই ইউনিয়নটিতে সরকারীভাবে একবার মাত্র একশ প্যাকেট ত্রান দেয়া হয়েছে।
যার মধ্যে ৫কেজি চাল, ২কেজি আলু,আধা কেজি ডাল,একলিটার তেল ও সাবান ছিলো।এই তালিকার মধ্যে গুচ্ছগ্রামের হতদরিদ্রদের কারো নাম ছিলো না।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.নাজমুল হুদা বলেন, কয়েকটি গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য শনিবার (১৮ এপ্রিল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পাটেশ্বরী গুচ্ছগ্রামে চেয়ারম্যান দিতে না চাইলেও আমি উনাকে বলেছি মাল নিয়ে বিতরনের জন্য। উজ্জ্বল রায় নিজস্ব প্রতিবেদক নড়াইল।